মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন না করেই গ্রামীণফোন থেকে অন্য অপারেটরে যেতে পারবেন মাত্র ৫০ টাকায় ।
লিখেছেন লিখেছেন ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না ১৫ জুন, ২০১৩, ১১:১৭:৪৭ সকাল
অবশেষে অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মতো মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) বা মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি, সিটিসেল, এয়ারটেল ও টেলিটক ইচ্ছামত পরিবর্তন করার সুযোগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশের গ্রাহকরা। এর জন্য গ্রাহকদের দিতে হবে মাত্র ৫০ টাকা।
বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের এমএনপি সুবিধা বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা জারি করেছে।
এতে বলা হয়েছে, এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটররা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০ টাকার বেশি নিতে পারবে না। আর আগামী সাত মাসের মধ্যেই গ্রাহকদের এমএনপি সুবিধা দিতে হবে। এ নির্দেশনা জারি বা আজ থেকে তিন মাসের মধ্যে অপারেটরদের এমএনপি সেবা শুরুর লক্ষ্যে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করতে হবে। বিটিআরসির একজন কমিশনার এই কনসোর্টিয়ামের বোর্ড মেম্বার থাকবেন।
কনসোর্টিয়ামই এ সেবা চালুর সব ধরনের ব্যয় বহন করবে। কনসোর্টিয়াম গঠনের তিন মাসের মধ্যে অপারেটরদের এমএনপি স্থাপন করতে হবে এবং এর এক মাস পর পরীক্ষামূলকভাবে অপারেটরদের এ সেবা শুরু করতে হবে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, সেবাটি দেওয়া গেলে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে নতুন করে সংযোগ নিতে হবে না। আইসিএঙ্-এ তাদের যে সংযোগ রয়েছে সেটাই কাজে লাগানো যাবে। তবে এ জন্য আইসিএঙ্গুলোকেও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সংগ্রহ ও সংযুক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশে এমএনপি সেবা চালু হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মোবাইল অপারেটরদের লাইসেন্স নবায়নে যে নীতিমালা চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে তাতে এমএনপি সেবার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে আইসিএঙ্ অপারেটরের সংখ্যা তিন। এমনই একটি অপারেটর এম অ্যান্ড এইচ টেলিকম। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা জানান, এমএনপি সেবা চালুর বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ও মতবিনিময় অব্যাহত রয়েছে।
অবশ্য এমএনপি সেবা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর ‘এয়ারটেল বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু হয়। সেদিন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস টবিট কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, বাংলাদেশের গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের উচিত মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) ব্যবস্থা চালু করা।
দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহ্মুদ হোসেন এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমএনপি চালুর বিষয়টি বেশ জটিল। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা যাতে প্রকৃত সেবা পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এর কারিগরি ব্যবস্থাটি সঠিকভাবে করতে হবে। আমরা এ সেবা চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি, তবে আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি অনুসরণ করে সব অপারেটরের মতামত নিয়ে এটা করতে হবে।’
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘লার্ন এশিয়া’র মতে এমএনপি সেবা উন্নত বিশ্বে সাড়া ফেললেও দক্ষিণ এশিয়ায় এটি সফল হবে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই সেবা চালু হলে মোবাইল শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, তেমনটি না-ও হতে পারে। বাংলাদেশেও সাধারণ গ্রাহকদের ৫৫ শতাংশ তাদের অপারেটর পরিবর্তন করতে চায় না।
লার্ন এশিয়ার এ কথা বছর খানেক আগের। গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি আরো জানিয়েছিল, দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ মোবাইল ব্যবহারকারী বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে এমএনপি সেবা গ্রহণের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, এই শ্রেণীর ব্যবহারকারীরা কোনো একটি নম্বরের প্রতি অনুগত থাকে না। তারা মূলত সামাজিক যোগাযোগের জন্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
বাংলাদেশের সাধারণ মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে ১০ শতাংশ একাধিক সিম ব্যবহার করে, যা এমএনপি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। তাদের এমএনপি সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা খুবই কম। এই গ্রাহকদের বেশির ভাগ প্রিপেইড সংযোগ ব্যবহার করে। বিভিন্ন অপারেটরের একাধিক সংযোগ এবং ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি নম্বরের সুবিধা নিয়ে তারা খরচ কমিয়ে থাকে।
নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের জন্য লার্ন এশিয়ার পরামর্শ ছিল, এমএনপি সেবার জন্য একটি সামঞ্জস্যমূলক কলরেট নির্ধারণ করে দিতে হবে, যাতে এ সেবা যারা গ্রহণ করবে, তারাই এর খরচ বহন করে। এমএনপি সেবা চালুর ফলে মোবাইল ট্যারিফে যেন কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব না পড়ে সেটা দেখতে হবে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ব্যয় বহনের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। এমএনপি সেবা চালুর আগে এর সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। কেননা, এমএনপি সেবা চালুর ফলে মোবাইল-বাজারে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
২১১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন